‘সিলেটের ১৯’ হচ্ছেন কারা?

প্রকাশিত: ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩

‘সিলেটের ১৯’ হচ্ছেন কারা?

সালমান ফরিদ : ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন। বাড়ছে হার্টবিট। কারা হচ্ছেন সিলেটের ভাগ্যবান ১৯ জন? যারা যাচ্ছেন সংসদে! আলোচনা বাড়ছে। চায়ের কাপে ঝড় তুঙ্গে। এগিয়ে আসছে ঝড় থেমে যাবার দিন। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে সম্ভাবনার প্রার্থীর তালিকা। এখন চলছে আলোচনা, বিশ্লেষণ। মূলত কোন দুজনের মধ্যে হবে লড়াই- এই তর্ক সর্বত্র। জমে উঠছে সবখানে।

 

বিএনপিসহ কিছু দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও থেমে নেই ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা। নানান শঙ্কার মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সরকার দল আওয়ামী লীগসহ ছোট কয়েকটি দল। ভোটের মাঠে তাদের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কাছে ‘পাত্তা’ পাবার কথা না থাকলেও সেই তারাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। জয়ে বাধা হয়ে আছেন স্বাতন্ত্র প্রার্থীরা।

 

তাদের বেশিসংখ্যকই দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’। যাদের বিদ্রোহের বৈধতা এবং অধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মীদেরও পছন্দের প্রার্থীর হয়ে কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে। মূলত একটি ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে নির্বাচনে প্রার্থীদের অংশগ্রহণ এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ নীতিতে গিয়েছে সরকারি দল। ফলে বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হয়ে ওঠেছেন নিজেদের লোকই। সিলেটেও তাই হচ্ছে। তাদের মধ্যেই হচ্ছে সংসদে পৌঁছার লড়াই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যারা আওয়ামী লীগ ঘরনার নন, তারাও উঠে এসেছেন আলোচনায়।

 

আওয়ামী লীগের বাইরে বড় কোনো দল নির্বাচনে না থাকায় সিলেটের ১৯ আসনে নিজেদের প্রার্থী জয়ী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আসনগুলো থেকে প্রত্যেককেই নিজেদের যোগ্যতায় বেরিয়ে আসার সুযোগ ও নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। তবে রাজনৈতিক সূত্র মতে, নির্বাচনপরবর্তি সরকারের স্বার্থে দলের বাইরে থেকে কয়েকজনকে সংসদে আসার পথ সুগম করে দেবে তারা।

 

সিলেট থেকে অন্তত ৫ টি আসনে দলীয় প্রার্থীকে না বসিয়ে অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মৌন সমর্থন দিয়ে তাদেরকে বের করে আনতে পারে। একটি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীও দেয়নি। এরই মধ্যে এরকম কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী থাকার পরও ছাত্রলীগ, যুবলীগকে নামানো হয়েছে অন্য প্রার্থীর পক্ষে। তারা ‘উপরের নিদের্শে’ মাঠে নেমেছেন বলে একাধিক সূত্রকে জানিয়েছেন।

 

এছাড়াও কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ‘ইশারা’ পেয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বা মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সিলেটে এরকম অন্তত ২ প্রার্থী আছেন যারা গায়েবানা ভোটের স্বপ্ন দেখছেন। তারা আছেন অনেকটা অটো-পাসের অপেক্ষায়। মাঠে তাদের খুব একটা তৎপরতা নেই। তাদের একজন সিলেটের, অপর দুজন সুনামগঞ্জের। অনেকে মনে করছেন, কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও তারা শেষমেষ বৈতরণি পার হয়েও আসতে পারেন।

 

মিথ আছে, সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার। অতীতে সবসময়ই এই মিথ বাস্তব হয়েছে। ফলে সঙ্গত কারণে এ আসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। সিলেট-১ এ এবার বলতে গেলে আর কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে নেই। একাই আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তিনি নির্ভার। নৌকা ছাড়া সিলেট-১ আসনে অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার-লিফলেট নেই। প্রচারণাও নেই। এ আসনে তার জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

 

সিলেট-২ আসনে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান। সূর্য প্রতীক নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন পুরো সিলেট-২। অথচ তিনি জানেন তার ভোট ব্যাংক ‘শূণ্য’। গেলবার বিএনপির সমর্থন পেয়ে এবং ‘ইলিয়াস আলী’ আবেগ কাজে লাগিয়ে জয় পেয়েছিলেন। এবার সেই সুযোগও নেই। তারপরও মাঠ ছাড়ছেন না। গণফোরামের সাথে সরকারের শেষমেশ দেনদরবারে কোনো ‘ইশারা’-‘ইঙ্গিত’ এলে যদি লাভ হয়, সেই আশায় মাঠ ছাড়ছেন না।

 

একই অবস্থা সাবেক আরেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরীর বেলায়ও। তিনি ‘ইলিয়াস আলী’ আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। অপেক্ষা করছেন জাপার সাথে সরকারের নতুন কোনো কৌশলে তার লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় কি-না। এরকম কিছু না হলে এ আসন থেকে খুব সহজে বেরিয়ে আসবেন নৌকার প্রার্থী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, ক্লিনম্যান হিসেবে পরিচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে কিছুটা ভোট টানতে পারেন বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। আর এই ভোট হবে নৌকার।

 

যদিও নানান সমালোচনা, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়া এবং মানুষের সাথে সুসম্পর্কের অভাবের কারণে ইমেজ সংকটে ভোগছেন তিনি। শফিক চৌধুরীর জয়ের বেলায় শেষমেষ তিনিও কোনোরকম বাধা হতে পারবেন না- এমনটিই মনে করছেন স্থানীয়রা। এ আসনে ইয়াহিয়া চৌধুরী এবং শফিক চৌধুরীর মধ্যেই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। স্থানীয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের একটি অংশ ইয়াহিয়া চৌধুরী ও মুহিবুর রহমানের হয়ে কাজ করছে। এটি শফিক চৌধুরীর গলার কাটা না হলে তার বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাই বেশি।

 

সিলেট-৩ আসনে ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ‘নৌকা’ চেয়েও পাননি। পেয়েছেন বর্তমান তরুণ এমপি হাবিবুর রহমান। ফলে ডা. দুলাল আর ভোটে দাঁড়াবেন না- এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত দাঁড়িয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার দল থেকে ‘ইশারা’ পেয়েই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। পারিবারিক অবস্থান, নিজের গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষা- সব মিলিয়ে একটি সম্ভ্রান্ত সমাজের প্রতিনিধি তিনি। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রভাবশালী ও মাদার সংগঠন ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ’-এর মহাসচিব ডা. দুলাল। এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। দলীয় ভোট ছাড়া হাবিবুর রহমানের ‘নিজস্ব’ কোনো ভোট এলাকায় নেই বললেই চলে। অনেকে মনে করছেন, প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু ভোট হলে বা কোনো অঘটন না ঘটলে ট্রাক মার্কা নিয়ে এ আসন থেকে বেরিয়ে আসবেন দুলাল। তবে হাবিবুর রহমানের জয়ের সম্ভাবনাকেও খাটো করে দেখছেন না কেউই।

 

সিলেট-৪ আসনে প্রায় একাই ধাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। উল্লেখ করার মত তার আসনে কোনো প্রার্থী নেই। ফলে তিনি নির্ভার থেকে জয়ের অপেক্ষায় দিনক্ষণ গুণছেন এখন।

 

সিলেট-৫ আসনে শেষ পর্যন্ত লড়াই থেকে হারিয়ে যেতে পারে ‘নৌকা’ প্রতীক। ইতোমধ্যে এর কিছু ইশারাও মিলেছে। উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ‘কেটলি মার্কা’র পক্ষে নেমেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কেটলি প্রতীকে লড়ছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ওলীয়ে কামেল আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলার (রহ.) ছোট ছেলে, আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যেভাবেই হোক মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর মত আলেম বা গ্রহণযোগ্য কাউকে এই রাজনৈতিক ও ইমেজের খরার মৌসুমে কাছে পাবার সুযোগ হাতছাড়া করবে না।

 

প্রধানমন্ত্রীর সব সময়ের গুডবুকে, শ্রদ্ধার খাতায় লিখা ফুলতলী সাহেবের পরিবারের নাম। এছাড়া কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরীকে ডেকে নেন গণভবনে। তার পরামর্শে তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। এ অবস্থায় তাকে বের করে আনার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে অনেকের ধারণা। তবে ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজের কারণে ভোটের মাঠে তিনি এগিয়ে রয়েছেন।

 

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ দল ও দলের বাইরে নানান সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছেন। আছেন ইমেজ সংকটেও। ট্রাক প্রতীক নিয়ে এ আসনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ড. আহমদ আল কবির। এনজিও প্রতিষ্ঠান সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ পক্ষ নিয়েছে তার। পলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ হলেও মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরীর সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তারইÑ এমটিই মনে করছেন ভোটার ও স্থানীয় রাজনীতিকরা।

 

সিলেটের দুটি আলোচিত আসনের একটি সিলেট-৬। ৪ হেভিয়েট প্রার্থী নেমেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ লড়ছেন নৌকা নিয়ে। সরকারের নির্বাচনী শরিক দল তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ও সাবেক জাদরেল কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরী আছেন সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে। আছেন জাপার সাবেক সাংসদ সেলিম উদ্দিনও। তবে ক্লিন ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে সবচেয়ে আলোচিত মুখ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন।

 

রাজনৈতিক সমঝোতার স্বার্থে সরকার দল নাহিদকে পাশ কাটিয়ে অটো-পাসের আশায় থাকা শমসের মুবিন চৌধুরীর দিকে ঝুঁকতে পারে- এমন একটি বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। দলের ভেতরেও এ নিয়ে নানা গুঞ্জন। এটি ইতিবাচক হয়ে উঠছে ‘ঈগল’ প্রতীকে স্বতন্ত্র সরওয়ার হোসেনের জন্য। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই ভিড়েছে তার দিকে। তিনি জনসম্পৃক্ত নেতা হিসেবে এলাকায় সমাদৃত। ফলে ভোটের মাঠের গণজোয়ার এখন তার দিকে। শেষ পর্যন্ত নাহিদ-শমসের এরক কোনো দুটান শুরু হলে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের নৌকার বড় একটি ভোটের অংশ ঝুঁকতে পারে তার দিকে। এরকম হলে লাভ হবে তারই। এ আসনে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন।

 

মৌলভী বাজার-১ আসনে বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দীন আহমদ নৌকার প্রতীকে লড়ছেন। এ আসনে আছেন জাপার ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনসহ মোট ৪ জন। তবে ভোটের দৌড়ে অনেক দূরে এগিয়ে আছেন শাহাব উদ্দিন। তিনিও তার আসনে নির্ভার।

 

মৌলভী বাজার-২ আসনে হবে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নৌকা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তার সাথে আছেন স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ও সাবেক কুলাউড়া উপজেলার চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান। আছেন বিএনপির সাবেক এমপি এমএম শাহীনও। তবে শেষ পর্যন্ত এ আসন থেকে সংসদে যেতে পারেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলই।

 

নির্বাচনী দৌড়ে তিনি এগিয়ে। মৌলভী বাজার-৩ এ নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন জিল্লুর রহমান। তার সাথে জাপার লাঙ্গল প্রতীকের আলতাফুর রহমানসহ ৭ জন। তবে মূল যুদ্ধ এদের দুজনের মধ্যে হলেও মাঠে আলতাফুর রহমান খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। প্রচারণার দৌড়ে এগিয়ে আছেন জিল্লুর রহমান। মৌলভী বাজার-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক চীফ হুইপ আব্দুস শহিদ। আরও ২ জন প্রার্থী তার সাথে থাকলেও তারা মাঠে নেই। একাই ধাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ফলে এই আসনে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেরকম গড়ে উঠছে না।

 

হবিগঞ্জ-১ আসন জাপার জন্য ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাপার লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী মুবিন চৌধুরী বাবু। তার প্রতিদ্বন্দ্বি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, প্রতীক ঈগল। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুর্শেদ চৌধুরীকে বসিয়ে এ আসনে জাপাকে দেয়া হয়েছে। মুর্শেদ ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন। ফলে এই ক্ষোভ থেকে আওয়ামী লীগের বড় অংশ কাজ করছে কেয়া চৌধুরীর সাথে।

 

তিনি সাবেক সংসদ সদস্য। কমান্ডেনন্ট মানিক চৌধুরীর মেয়ে হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা এলাকায় বেশি। অবশ্য আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারেন মুবিন চৌধুরী বাবু। হবিগঞ্জ-২ এ আছেন নৌকার তরুণ প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরিফ রুহেল। তার সাথে আছেন ঈগল মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মজিদ খান। দুজনের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

 

তবে পাল্লা ভারি রুহেলের দিকেই। হবিগঞ্জ-৩ এ আয়েশি মুডে আছেন এডভোকেট আবু জহির নৌকা নিয়ে। তিনি বর্তমান এমপি। তার প্রতিদ্বন্দ্বি মুনিম চৌধুরী বুলবুল লাঙ্গল মার্কা নিয়ে এলেও তার জেতা খুব কঠিন হয়ে উঠবে। হবিগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বিমানমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন আলোচিত ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন। মাঠ গরম করে তুলেছেন তিনি। অনেকে মনে করছেন, ভোটকেন্দ্রে মানুষ আনার জন্য তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারেন মাহবুব আলীই। সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও মধ্যনগর—এই চার উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি ‘আলোচিত-সমালোচিত’ সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।

 

পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার। তবে রতনের জনপ্রিয়তার কাছে ভিড়তেই পারছেন না রনজিত সরকার। পাল্লা ভারি হয়ে আছে রতনের দিকে। সুনামগঞ্জ-২ দিরাই-শাল্লা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের ছয় বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও জাতীয় রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রয়াত হলে উপ-নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন তারই সহধর্মিনী ড. জয়া সেনগুপ্তা। একাদশ নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। এবার তিনি মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

 

লড়ছেন স্বতন্ত্রী প্রার্থী হয়ে কাঁচি প্রতীক নিয়ে। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী)। তিনি বর্তমান পুলিশ বাহিনীর প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোটভাই। স্বামীর ইমেজে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও ব্যক্তি মাহমুদের ইমেজের কাছে পরাজিত হতে পারেন জয়া। এলাকায় আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ভোটের পাল্লা ভারী বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের বর্তমান এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান। এ আসনে নিজের দল জমিয়ত থেকে বেরিয়ে গিয়ে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইশারায়ই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হবার আগে বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এ আসন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন তিনি। সিলেটে যে দুজন প্রার্থী অটো-পাশের আশা করছেন, তিনি তাদের একজন। তবে ভোটের মাঠে আব্দুল মান্নানের সাথে ঠক্কর দেয়া তার জন্য কঠিন- এ ধারণা প্রত্যেকের। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক।

 

তিনি সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক সচিব। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামসুল আবেদীন। নোঙর প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তিনি। ভোটের মাঠে এখনও এগিয়ে আছেন ড. সাদিক। একজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির সুনামের কাছে শেষ পর্যন্ত সাবেক এমপি পারবেন কিনা সেই সংশয় ভোটারদের মাঝে রয়েই গেছে।

 

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান মানিক নৌকা প্রতীক নিয়ে। তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা, স¦তন্ত্রপ্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ দুজনের মাঝে।