৩ দফায় সময় বাড়িয়ে শেষ হয়নি ক্বীন ব্রিজের সংস্কার কাজ

প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০২৩

৩ দফায় সময় বাড়িয়ে শেষ হয়নি ক্বীন ব্রিজের সংস্কার কাজ

মো: আবু বক্কর : ৭০০ বছরের বেশি সময় আগে সুরমা নদীর পাড়ে টিলাঘেরা বর্তমান সিলেট নগরীর গোড়াপত্তন। সেই সময় থেকেই ভারতবর্ষের এ জনপদে যাতায়াতের একমাত্র উপায় ছিল নৌপথ। পরে ১৯৩৬ সালে এই নদীর ওপর নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন একটি ইস্পাতের সেতু। এর মধ্য দিয়ে সিলেট শহরের সঙ্গে অখণ্ড ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়।

 

সেতুটি নির্মাণের সময় সিলেট নগরী ছিল আসাম প্রদেশের অধীনে, সেখানকার গভর্নর ছিলেন স্যার মাইকেল ক্বীন। ১ হাজার ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্ত এই সেতুটি তাঁর নামেই নামকরণ করা হয় ক্বীন ব্রিজ। তৎকালীন রেলওয়ে বিভাগের নির্মাণ করা প্রায় শতবর্ষী এ সেতুর এখন ভগ্নদশা। এটি প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সেতুটির ভেঙে ফেলা একাংশ সাময়িক এবং পরে ১৯৭৭ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার করা হয়। এর পর বড় ধরনের কোনো সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি।

সিলেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থপনা হলো ক্বীনব্রিজ। এটি সিলেট শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার। তবে, ৩ মাসের অধিক সময় অতিক্রম হলেও শেষ হয়নি ক্বীনব্রিজের সংস্কার কাজ। ৩ দফায় সময় বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর ব্রিজ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ না হওয়ায় আবারও বাড়ছে সময়। এবার আরেক দফায় ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে নোটিশ টানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে অবশিষ্ট কাজ আগামী ১৫ দিনে শেষ করা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। ফলে আবারো দীর্ঘায়িত হচ্ছে জনদুর্ভোগ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কারের জন্য ক্বীনব্রিজ বন্ধের সাড়ে ৩ মাস পার হয়েছে। দুইমাস সময় হাতে নিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করলেও সাড়ে ৩ মাসেও শেষ হয়নি কাজ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন নির্ধারিত সময়ের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে, খুলে দেওয়া হবে ক্বীনব্রিজ। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখন নতুন করে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে এরমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এই নির্ধারিত সময়েও ব্রিজটি খোলা নিয়ে রয়েছে সংশয় ।

 

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ আগস্ট কিনব্রিজ মেরামত, নবায়নসহ নির্মাণকাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুইমাস ব্রিজের উপর দিয়ে সবধরনের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর পথচারীদের চলাচল বন্ধ করতে সেতুটির দুই পাশে দেওয়া হয় টিনের বেড়া।

 

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্বীনব্রিজের মেরামতকাজের জন্য আরো ১৫ দিনের মতো সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ও পথচারীদের জন্য ক্বীনব্রিজ বন্ধ থাকতে হবে। এরমধ্যে ব্রিজটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী বলেও জানান।

 

পথচারী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে যাতায়াতের সহজপথ ক্বীনব্রিজ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে মেরামতকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। ব্রিজ মেরামতের কাজ ধীরগতিতে চলায় বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষেন। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা উভয়ই বাড়তি লাগছে। লাভবান হচ্ছে খেয়া পারপারের ইজারাদাররা এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।

 

সেতু মেরামতের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রিজের মেরামতকাজ চলমান। দুই মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সংস্কার করতে গিয়ে সেতুর দুই পাশের পাত অকেজো অবস্থা পাওয়া গেছে। যা আগের হিসাবে ছিলনা। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। সেতুটি দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে আরও শ্রমিক নিয়োগ করে চলছে সেতুর কাজ।

 

১৬ ডিসেম্বরের আগেই পথচারীদের জন্য ক্বীনব্রিজ খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে রেলওয়ে সেতু বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, আরও পনেরাদিনের জন্য ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন ও পথচারী চলাচল বন্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

 

এ ব্যাপারে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জিসান দত্ত জানান, সেতুটির দুই পাশে লাগানো পাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো মেরামত করতে সময় বেশি লাগছে। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগেই পথচারীদের জন্য ব্রিজটি খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ব্রিজের ওপর কার্পেটিংয়ের পর সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

 

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকা কে বলেন, ব্রিজটি সওজের অধীনে থাকলেও সংস্কার কাজ করছে রেলওয়ে বিভাগ। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে নতুন করে আরো কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে যায়। ফলে সংস্কার কাজে একটু বেশি সময় নিতে হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আশ^স্ত করেছেন আরো ১৫ দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ব্রিজটি খুলে দেওয়া হবে। এজন্য তারা অতিরিক্ত শ্রমিকও নিয়োগ করেছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন