সাবেক সহকর্মী শহীদ সেনা সদস্য (অব) মাহবুব এর স্মরণেঃ

প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২২

সাবেক সহকর্মী শহীদ সেনা সদস্য (অব) মাহবুব এর স্মরণেঃ

স্কোয়াড্রন লিডার সাদরুল আহমদ খানের : সাবেক সহকর্মী শহীদ সেনা সদস্য (অব) মাহবুব এর স্মরণেঃ

Once a soldier, always a soldier.
সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে মাহবুব তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করতেন।

২১ আগস্ট ২০০৪ মাহবুব নেত্রীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দায়িত্ব পালনরত, লাখো মানুষের জনসমুদ্র। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত চারদিক। শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষ করে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল নিয়ে ৩২ নম্বর যাবেন। মাহবুব বিকারহীন, সামান্যতেই অস্থির হওয়ার লোক সে নয়।

মাহবুব সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের আর্মস ছিল না।বেশ কিছুদিন ধরে আর্মসের পারমিশন চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেও সাড়া পায়নি মাহবুব সহ তাঁর বাকি সহকর্মীরা। আর্মস ছাড়া গার্ড দেয়া বেশ বেশ বিপদজনক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সবাই আনআর্মড। কেবল বুকে সাহস নিয়ে মাহবুব সহ সবাই গার্ড দিচ্ছেন।
.
২১ আগস্ট বিকেল ৫:২২ মিনিট, নেত্রী বক্তৃতা শেষে মঞ্চের সিঁড়ি দিয়ে নামবেন,চারদিক জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে মুখর। মাহবুব ঠাঁয় দাঁড়িয়ে সিঁড়ির কোনায়। শেষ বারের মত চোখের সামনে বিশাল জনসমুদ্রের দিকে মাহবুব তাকালো। নেত্রী ৫/৬ কদম হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে নামবেন।
.
হঠাৎই ……………………………… দুমমমমমম! দুমমমমমমমমম দুমমমমমমমমমমমম
মোট ১৩ বার! শব্দ শুনে মাহবুব বুঝে গেলেন শক্তিশালী নতুন মডেলের গ্রেনেড। সেনা বাহিনীতে থাকার সময় এসব দেখেনি মাহবুব।

মাহবুব ডান হাত দিয়ে নেত্রীর হাত টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণে ফুটেছে আরো ৪ টা। কান শোঁ শোঁ করছে। নিশ্চয় পর্দা টা অস্তিত্ব বিলীন। বাঁ চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সবাই মিলে নেত্রী কে ধরে গাড়িতে তুলে দিলেন।

হুশশশশশশশশশশ টাটা টা টা টা ট্যাররররররররররর করে আওয়াজ করতে করতে কি যেন কানের পাশ দিয়ে গাড়ির কাঁচে লাগলো। মাহবুব চমকে উঠলো। মাহবুবের দাঁত মুখ শক্ত হয়ে গেলো। ২/১ টা বুকে এসেও বিঁধেছে।মাহবুব চিনে ফেললো, রাইফেলটার ওজন ৪.৭৮ কেজি, ৬০০ টা বুলেট একবারে ফায়ার করা যায় তাও ১ মিনিটে। ৪০.৬ ব্যারেল লেগন্থ, প্রত্যেকটা বুলেটের ওজন ১২২ গ্রাম, বুলেটের ভ্যালোসিটি ২৩৩০ফুট পার সেকেন্ড বা ৭১০ মিটার পার সেকেন্ড। ১০০ মিটার দূরের থেকে ১৫ সেন্টিমিটারে যেকোনো টার্গেট এ ফায়ার করা যায়। আর কার্টিজ হলো ৭.৬২*৩৯ মিলিমিটার। এক কথায় সাক্ষাত আজরাইল।রাইফেল টা হলো একে-৪৭।
.
এসব ভাবতে ভাবতে মাহবুবের বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেলো। ফুলহাতা শার্ট রক্তে ভেজা। মাথা ঝিম মেরে উঠলো। মাথায়ও বুলেট ঢুকেছে, একে-৪৭ এর বুলেট। এক চোখে কিছুই দেখছে না।

নেত্রীর গাড়ি বিদ্যুৎ বেগে ছুঁটছে, শেষ বুলেট টা ঘাড়ের পেছন দিয়ে ঢুকে মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো।নেত্রীর গাড়ি সেইফ জোনে যাচ্ছে, তাকিয়ে মাহবুব একটা মুচকি হাসি দিলো। বিজয়ের মুচকি হাসি, মাহবুব শেষ হাসি হাসলো,এই হাসি বিজয়ের।

প্রিয় পাঠক একজন দেশ প্রেমিক সেনা সদস্য বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে নিজ সেবা দিয়ে যেতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শহীদ মাহবুব। ২১ এ আগস্টের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার সাদরুল আহমদ খান

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
২১ আগস্ট ২০২২