বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গঠন ও আধুনিকায়ন হয়েছে আ‘লীগ সরকারের হাত ধরেই

প্রকাশিত: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২২

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গঠন ও আধুনিকায়ন হয়েছে আ‘লীগ সরকারের হাত ধরেই

সাদরুল আহমেদ খান : স্বাধীনতাপূর্বকাল থেকে ১৯৭৫: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামগ্রিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় সবসময় একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলেন। তাই ১৯৬৬-এর ছয় দফার অন্যতম দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্থানের কর্তৃত্বাধীন আঞ্চলিক সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা। ১৯৬৮ সালে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর সাথে আসামিও ছিলেন বাঙালি সামরিক সদস্যবৃন্দ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে বাঙালি সশস্ত্র বাহিনী সদস্যরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন আর ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা পাকিস্তান সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। অনেকে পশ্চিম পাকিস্থান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

 

সশস্ত্র বাহিনীর সাথে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্পর্কও ছিল সুদৃঢ়, বঙ্গবন্ধু প্রথম পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ফার্স্ট বাংলাদেশ অফিসারস ওয়ার কোর্স থেকে এবং ২য় পুত্র লেফটেন্যান্ট জামাল স্যান্ডহারস্ট থেকে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেছিলেন। ছোট্ট শেখ রাসেলও বড় হয়ে সেনা অফিসার হবার স্বপ্ন দেখতেন

 

সশস্ত্র বাহিনী গঠন (১৯৭২-১৯৭৫): বঙ্গবন্ধু আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর রূপকার, ১৯৭২-এর ৭ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু তিন বাহিনীর জন্য আলাদা আলাদা সদর দপ্তর ও বাহিনী প্রধান নিয়োগ করেন। একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের জন্যই “সশত্র বাহিনী নীতি” প্রণয়নের কাজ শুরু করেন যা ১৯৭৪ সালে প্রকাশ পায়।

 

সেনাবাহিনী গঠনে আওয়ামী লীগ (১৯৭২-৭৫): বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি, সম্মিলিত ট্রেনিং সেন্টার, প্রতিটি সেনা কোরের জন্য আলাদা আলাদা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অন্যান্য অনেক ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু মিশর থেকে সেসময়ের অত্যাধুনিক টি-৫৪ ট্যাঙ্ক নিয়ে আসেন। ২২ অক্টোবর ১৯৭৩ তারিখে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল টিম প্রেরণ করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে পরিচিতি দেন, সেই থেকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী প্রেরণের সূচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।

 

নৌবাহিনী গঠনে আওয়ামী লীগ (১৯৭২-৭৫): বঙ্গবন্ধু নৌবাহিনীর জন্য বিএনএস ইসা খান, হাজী মহসিন ও তিতুমীর উদ্বোধন করে ৩টি জাহাজও কমিশনিং করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু যুক্তরাজ্য থেকে যুদ্ধ জাহাজ বিএনএস ওমর ফারুক আনার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বিচক্ষণ ও দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে “টেরিটোরিয়াল ওয়াটার অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট ১৯৭৪” প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুর এই যুগান্তকারী অ্যাক্টের ভিত্তিতেই ২০১২ সালে মায়ানমারের বিপক্ষে এবং ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে “সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে” জলসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের জয়লাভ সহজ হয়েছিল।

 

বিমানবাহিনী গঠনে আওয়ামী লীগ (১৯৭২-৭৫): বিমানবাহিনীর জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোরে বিমানঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে একটি বহুমুখী বাহিনীতে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধু সে সময়ের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২১, আধুনিক পরিবহন বিমান আন্তনোভ-২৪ এন-২৬, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এমআই-৪ হেলিকপ্টার নিয়ে আসেন। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে নিজ হাতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

 

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন (১৯৯৬ থেকে ২০০০): ১৯৭৫ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারালাম। এর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

 

সে সময় সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে দু’যুগের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা শান্তিবাহিনীর হানাহানি। অপারেশন দাবানলসহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাকালে ৩১২ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছিলেন, আহতের সংখ্যাও ছিল অনেক। পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় দায়িত্বপালনকালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন অনেক সশস্ত্র বাহিনী সদস্য। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পাহাড়ে দীর্ঘদিনের হানাহানির অবসান ঘটালেন। শান্তিপূর্ণভাবে একটি যুদ্ধের অবসান করে শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেন। সশস্ত্র বাহিনীকে পাহাড়ের নিরাপত্তা, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে নিয়োগ করে সরকার। যুদ্ধের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন, খাদ্য ও বনজ শিল্পের সম্ভাবনার বীজ বপন করে সরকার।

 

সশত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ১৯৯৮ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এনবং মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমাইএসটি) উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশনস ট্রেনিং সেন্টার (বিপসর্ট), আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (এএফএমসি) এবং ২২টি ক্যান্টনমেন্ট পাব্লিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ সরকার।

 

২০০০ সালে সেনাবাহিনীর ‘৪৭তম বিএমএ লং কোর্স’, নৌবাহিনীর ‘২০০০-এ অফিসার ক্যাডেট ব্যাচ’ ও বিমান বাহিনীর ’৪৫ গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ কোর্সে’ প্রথম নারী অফিসারদের নিয়োগ শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীতে নতুন ধারার সূচনা করে আওয়ামী লীগ সরকার।

 

সেনাবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ (১৯৯৬-২০০১): এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীতে একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, একটি পদাতিক ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনসহ একাধিক আর্টিলারি রেজিমেন্ট, রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, পদাতিক সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স ও ডিভ অর্ডন্যান্স কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে। আগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা একবেলা রুটি একবেলা ভাত খেতে পারতো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সেনা সদস্যদের দুবেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

 

নৌবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ (১৯৯৬-২০০১): আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে নৌবাহিনীর জন্য নেভাল শিপ তিতাস, কুশিয়ারা, বরকত, মধুমতি ও শৈবাল কমিশন করে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অত্যাধুনিক গাইডেড মিজাইল ফ্রিগেড (এফ-২৫) বিএনএস বঙ্গবন্ধু সংযোজন করে, প্রতিষ্ঠা করে ‘স্কুল অব মেরিটাইম ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড ট্যাক্টিক্স’। নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফী সক্ষমতাকে বিশ্বমানের পর্যায়ে উন্নীত করার সকল পদক্ষেপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে হস্তান্তরের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এ সময়েই।

 

বিমানবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ (১৯৯৬-২০০১): আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বিমানবাহিনীতে সংযোজন করে চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯, পরিবহন বিমান সি-১৩০ এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার।

 

সশত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ২০০৮ থেকে চলমান: ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার দেশ সেবায় সুযোগ পেয়ে প্রশিক্ষিত ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, অঙ্গীকার ও গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে। জাতির পিতা সশস্ত্র বাহিনীর যে আধুনিকীকরণ শুরু করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেটা আরও বেগবান হয়।

 

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত নীতি: আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে দক্ষ জনবল, আধুনিক সরঞ্জাম, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়ে পরিপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে “ফোর্সেস গোল ২০৩০” প্রণয়ন করে। সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতোই “ফোর্সেস গোল ২০৩০” সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে সরকারের একটি পরিকল্পনা এবং রূপরেখা। ২০১৮ সালে “ন্যাশনাল ডিফেন্স পলিসি ২০১৮” প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৬ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানের রেঙ্ক আপগ্রেড করে তিন বাহিনী প্রধানদের সমপদবীর রেঙ্ক নির্ধারণ করে সরকার।

 

সশস্ত্র বাহিনীর জনবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়ন: সেনাবাহিনী: আওয়ামী লীগ সরকার এই তিন মেয়াদে দায়িত্বপালনকালে নতুন নতুন সেনানিবাস, নৌ ও বিমানবাহিনীঘাঁটি স্থাপন করে প্রয়োজনমত জনবল নিয়োগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এই সময়ে পটুয়াখালীতে ৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, কিশোরগঞ্জে রিভারাইন ব্রিগেড, ঢাকায় এডি ব্রিগেড, পদ্মা সেতু কম্পোজিট ব্রিগেড, কমান্ডো ব্রিগেড, ২টি পদাতিক ব্রিগেড, ১০টি ব্যাটালিয়ান, এনসিও’স একাডেমিসহ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমূহ স্থাপন করে। বাংলাদেশ মিশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এর সক্ষমতা বাড়িয়েছে সরকার, চালু করেছে বিশ্বমানের বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর।

 

নৌবাহিনী: আওয়ামী লীগ সরকার নৌবাহিনীর জন্য কক্সবাজারের পেকুয়াতে বানৌজা শেখ হাসিনা, পটুয়াখালীর রাবনাবাদে বানৌজা শের-ই-বাংলা, ঢাকার খিলক্ষেতে বানৌজা শেখ মুজিব, চট্টগ্রামে বানৌজা নির্ভীক নৌঘাঁটি নির্মাণ করেছে। স্থাপন করেছে নেভাল এভিয়েশন, স্কুল অব লজিস্টিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, বিএন বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে একটি ফ্লিট হেডকোয়ার্টারের নির্মাণকাজ চলছে।

 

বিমানবাহিনী: এ সরকার বিমানবাহিনীর জন্য ঢাকায় বিএএফ বেইজ বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজারে বিএএফ বেইজ শেখ হাসিনা নামক দুটি বিমানবাহিনীঘাঁটি স্থাপন করে। সিলেট ও বরিশালে নতুন দুটি ঘাঁটি স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। বিমান সেনা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স, ১০৩ ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার এবং ১০৫ জেট ট্রেইনার ইউনিট প্রতিষ্ঠিত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথমবারের মতো বিমানবাহিনীতে যুক্ত করেছে ৩০১ সারফেস টু এয়ার মিসাইল ইউনিট। বরিশাল ও কক্সবাজারে স্থাপিত হয়েছে দুটি রাডার ইউনিট, ঢাকা পাহাড়কাঞ্চনপুর চট্টগ্রাম ও যশোরের পুরাতন রাডার গুলো পুনস্থাপন করেছে সরকার। ২০৭, ২১৪ এবং ২১৬ মেইন্টেনেন্স রিপেয়ার অ্যান্ড ওভারহোলিং ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিং-এর লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ ও এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন (এডিএনসি) সেন্টারও নির্মাণ করেছে সরকার।

 

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকার বিমানবাহিনীর বহরে যোগ করেছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান K8W, YAK130, F7BGI, GROB G120। পরিবহন বিমান L410,C130J হেলিকপ্টার MI171SH, MI171E, AW139। সরকার আরও যুক্ত করেছে এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার সিমুলেটর, ইউএভি,এরিয়াল ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্টস ইত্যাদি।

 

সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ শিক্ষা বিস্তার ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন: সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালেই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলা বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অব প্রফেশনালসকে ঢেলে সাজায় আওয়ামী লীগ সরকার।

 

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চালু হয় সেনাবাহিনী প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নাটোর, সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সৈয়দপুর, সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা।

 

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শমশেরনগর, বগুড়া ও পাহাড়কাঞ্চনপুরে ৩টি বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করেছে সরকার।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ‘প্রত্যয়’, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ‘আশার আলো’ এবং বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে “নবোদয়” স্কুল পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

 

সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বীকৃতি: সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতিসংঘের কাজের পরিধি অনুযায়ী নারী সৈনিক নিয়োগের একটা চাহিদা ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীতে” রিক্রট ব্যাচ-৭১” নারী সৈনিক, ২০১৬ সালে নৌবাহিনীতে “এ-২০১৬ ব্যাচ’ নারী নাবিক, এবং ২০২০ সালে বিমানবাহিনীতে “রিক্রুট এন্ট্রি-৪৮” তে নারী বিমান সেনা পাসিং আউটের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীতে নব যুগের সূচনা করে আওয়ামী লীগ সরকার। মেধাবী, চৌকস ও দেশপ্রেমিক নারীদের পবিত্র পেশায় নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী সমৃদ্ধ হয়েছে। জাতিসংঘের চাহিদামতো বিভিন্ন মিশনে ‘ফিমেইল পিস কিপার’ প্রেরণ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন মিশনে কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১৯ সালে দক্ষিন সুদানে প্রথম ‘অল ফিমেইল কোম্পানি’ মোতায়েন করে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী।

 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহারে সশস্ত্র বাহিনীকে আগ্রাধিকার প্রদান: শান্তি ও আপদকালিন সময়ে নিজস্ব, নিরাপদ, নিরবিচ্ছিন্ন ও উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও ডিজিএফআই- এই চার প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর তিনটি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

 

সশস্ত্র বাহিনীতে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল: সেনাবাহিনী: সরকার আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন’।

 

নৌবাহিনী: বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইএফএফ প্রস্তুতকরণ প্রকল্প, মাইন-টর্পেডো ডেভেলপমেন্ট, গান ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

 

বিমানবাহিনী:বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দ্বারা উন্নত প্রযুক্তির সফটওয়্যার তৈরি করে সাইবার নিরাপত্তা ও নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক ওয়ারফেয়ারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।

 

সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আবাসন ও জীবনমান উন্নয়ন: প্রাধিকারপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প চলমান আছে। ডিওএইচএস এর ব্যাপ্তি ঢাকার বাইরের জেলায়ও বিস্তৃত হয়েছে। অন্যন্য পদবীদের জন্য সেনা আবাসন প্রকল্প করা হয়েছে। সেনা পল্লী আবাসনে ফ্লাট/প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামীলীগ সরকার ।

 

সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন: আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর, কুমিল্লা ও বগুড়া সেনানিবাসে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ চালুর অনুমতি দেয়।সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে সিএমএইচগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন ডিপার্টমেন্ট ও ওয়ার্ড সংযোজন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশব্যাপী সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট ইত্যাদিসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। রাজধানীর কুর্মিটোলায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালও স্থাপন করেছে সরকার।

 

সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র গোলাবারুদ ও সামরিক যান: সেনাবাহিনীতে সংযোজন: উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, এপিসি, সারফেস টু এয়ার মিসাইল, বিমান, ইউএভি, হেলিকপ্টারসহ মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামাদি, আকাশে বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছে।

 

নৌবাহিনীতে সংযোজন: নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, পেট্রোল ক্রাফট, সাবমেরিন, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে ‘সোয়াডস’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামের দুটি সাবমেরিন কমিশন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বিমানবাহিনীতে সংযোজন: বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

 

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণে সহায়ক পদক্ষেপ: আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকাকেও প্রশংসিত করেছে আমদের সশস্ত্র বাহিনী। জাতিসংঘের চাহিদা অনুযায়ী শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অধিক সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণ এবং নিজ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র, যুদ্ধযান, হেলিকপ্টার ও বিমান কিনেছে সরকার। ২০১৬ সালে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে “বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার”। যার ফলে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

 

পরিশেষে বলাই যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করছে। কারণ আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহংকার। সমরে ও শান্তিতে সর্বত্র দেশের জন্যে, সমূদ্রে দুর্জয় সশস্ত্র বাহিনী বাংলার আকাশ মুক্ত রাখবে এটাই আমাদের বিশ্বাস।

 

সবাইকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের শুভেচ্ছা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

 

লেখক: সাদরুল আহমেদ খান
সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্কোয়াড্রন লীডার (অব.) ও সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস।