দিরাইয়ে আ’লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ ॥ নিহত ১

প্রকাশিত: ১:২৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২২

দিরাইয়ে আ’লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ ॥ নিহত ১

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম আজমল হোসেন চৌধুরী আরমান (৩৫)।

 

তিনি উপজেলার কুলঞ্জ গ্রামের আব্দুল হান্নান চৌধুরীর ছেলে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবি করেছেন, নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী তার গ্রুপের কর্মী। অন্যদিকে সংঘর্ষকালে উপস্থিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে প্লাস্টিকের চেয়ারকে ঢাল বানিয়ে আত্মরক্ষা করতে দেখা যায়। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে দিরাই বিএডিসি মাঠে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২ টায় বিএডিসি মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। সাড়ে বারোটার পর প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির অতিথিরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। বেলা ১ টায় সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায় মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে আসেন। এ সময় তারা মঞ্চে উঠতে চাইলে বাঁধার সম্মুখীন হন। এর মধ্যেই দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দু’পক্ষের সংঘর্ষে সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় নেতাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক মিয়া, দিগেন্দ্র লাল, সৈয়দ তালেব, আশিকুর রহমান, মতিউর রহমান, বাবুল মিয়া, নাজিম উদ্দিন, মোহন মিয়া, মহিলা মেম্বার নিয়াশা তালুকদার, আব্দুল ওয়াহাব, সাগর মিয়া, টুনু মিয়া, সাজু তালুকদার, হেলাল মেম্বার, মিল্টন রায়, নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন, জাহিদুল হাসান ও অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন। তারা দিরাই উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

 

গেল উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতাকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। বর্তমানে একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। অন্য গ্রুপে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া। সম্মেলন সফল করতে দুই গ্রুপের তৎপর অবস্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। তবুও দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

 

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, সম্মেলনের শুরুতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও সংঘর্ষ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। সম্মেলন ঘিরে দু’পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ হতে পারে-এমন খবরে আগে থেকেই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চার প্লাটুন পুলিশ ও ডিবির লোক উপস্থিত ছিল। এরপরও এমন সংঘর্ষের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
আজমল হোসেন চৌধুরীর ভাগ্নে রহমত আলী বলেন, ‘আমি ও মামা এক সাথে সম্মেলনে ছিলাম। আমার ও মামার উপর দুটি ইটের ঢিল এসে পড়লে মামা পিঠে আঘাত পান। তাৎক্ষণিক তার আঘাতস্থলে বরফ লাগিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। এক পর্যায়ে মারা যান মামা’।

 

অন্যদিকে সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মঞ্চে অবস্থানরত অতিথিরা নিজেদের বসার চেয়ারকে ঢাল বানিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সম্মেলন শুরু হয়।

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের সঞ্চালনায় সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা সভাপতি মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, শামিমা শাহরিয়ার, জেলা সেক্রেটারি এনামুল কবির ইমন।

 

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন