কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে সিলেটের সাবেক দুই ডিআইজি’র

প্রকাশিত: ১২:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২২

কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে সিলেটের সাবেক দুই ডিআইজি’র

নিউজ ডেস্ক : একজন ছিলেন সিলেট রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক)। আরেকজন সিলেটে কর্মরত ছিলেন ডিআইজি প্রিজন্স হিসেবে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে দুজনই এখন কারান্তরীণ। কীভাবে কাটছে তাদের কারাভোগের জীবন? এ বিষয়ে গত ২৫ অক্টোবর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা টাইমস’।

 

জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন পুলিশের বরখাস্ত, বহুল আলোচিত-সমালোচিত সিলেটের সাবকে ডিআইজি মিজানুর রহমান। অবৈধ সম্পদের মামলায় সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই কারাগারে আছেন। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বন্দিজীবন কেমন কাটছে?

 

কারাসূত্র জানায়, নানা অনৈতিক আর অবৈধ কাজের দায়ে দণ্ডিত ডিআইজি মিজানের কারাগারে দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ দিয়ে।

 

কারা সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন ডিআইজি মিজান। ফজরের নামাজ আদায় করে পত্রিকা নিয়ে বসেন। দিনের বেশির ভাগ সময় কারাগারে নিজের ঘরে সময় কাটান তিনি।

 

ডিআইজি মিজান সেখানে বন্দি ও কর্তব্যরত কারারক্ষীদের সঙ্গে খুব কম কথা বলেন বলে জানায় সূত্র। আর এ জন্য কারারক্ষীসহ অন্যরাও তার সঙ্গে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে চান না। নিজের মনে পায়চারি করেন মিজান। সময়ে সময়ে বিভিন্ন বই ও পেপার পড়েন। এ ছাড়া নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়েন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

২০১৯ সালের ১ জুলাই অবৈধ সম্পদের মামলায় ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। এরপর থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি পুলিশের এক সময়ের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা।

 

ঘুষ লেনদেনের মামলায় জামিন পেলেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় কারাগারে ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন মামলায় তিন বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে অবৈধ সম্পর্দ অর্জনের মামলায় এখনও তিনি জামিন পাননি।

 

চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের একক বেঞ্চ ঘুষ লেনদেনের মামলায় দুই মাসের জন্য ডিআইজি মিজানের জামিন মঞ্জুর করেন।

২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানিলন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। এছাড়াও দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ডিআইজি মিজানকে।

 

২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

 

এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫ (এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে।

 

৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।

 

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।

 

পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ওয়ান ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখার সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) গোলাম রসুল ভূঁইয়া তার সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করেছেন। বর্তমানে মামলাটিতে ঢাকার বিশেষ জজ আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

 

তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ জুন মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। মামলায় ডিআইজি মিজান ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ওরফে রত্না রহমান, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগিনা মাহমুদুল হাসান। মাহমুদুল রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট তিনি এসআই হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আসিফুজ্জামান এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

 

অপরদিকে, ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সিলেটের সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিককে পৃথক দুটি অভিযোগে আট বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় পাঁচ বছর, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

 

এছাড়া ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় আরও তিন মাস কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। রায়ের পর থেকে কাশিমপুর পার্ট-১ এর কারাগারে আছেন পার্থ গোপাল বণিক। তার পর থেকেই কাশিমপুর পার্ট-১ এর কারাগারে বন্দি আছেন পার্থ গোপাল বণিক।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারে সাধারণ বন্দীর মতোই থাকেন পার্থ গোপাল। তিনি কারাগারের একটি বাগানের মালির কাজ করেন। এছাড়াও কারাবিধি মেনেই তিনি সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

 

এ ব্যাপারে কাশিমপুর পার্ট-১ এর জেল সুপার মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘তিনি আমাদের কারাগারে আছেন। তাকে একটি বাগানে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

 

২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল থেকে পার্থ গোপালকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকালে তার গ্রিন রোডের বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেন। পরে তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

২০২০ সালের ২৪ আগস্ট একই কর্মকর্তা ডিআইজি পার্থের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। একই বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

 

সিলেটে দায়িত্ব পালনের আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করেন পার্থ গোপাল বণিক। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজনস হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে এবং চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তারপরই অভিযানে যায় কমিশন। পরে ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেপ্তারের দিন থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন