প্রকাশিত: ১২:০৪ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক : চেঙ্গেরখাল নদীর পানিতে মধ্যরাতে চোখের সামনে ভেসে গেছে মাথা গোঁজার ঘরটি। নিরুপায় বাবা-মা বিপদ জেনেও সন্তানদের নিয়ে উঠেছেন প্রতিবেশীর ঘরে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের ইসমাইল আলী (২৭)।
গত বুধবার মধ্যরাতে চেঙ্গের খাল নদীর পানিতে ভেসে গিয়েছে তার বসত ঘরটি। স্ত্রী ও তিন সন্তানদের নিয়ে তড়িগড়ি করে কোনো রকম মালামাল নিয়ে পাশের প্রতিবেশীর ঘরে উঠেন।
ইসমাইল আলী জানান, তিনদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। এখন পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বা চেয়ারম্যান কেউ কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি উপজেলা প্রশাসেনর কাছ থেকেও কোনো ধরণের সহযোগীতা পাননি।
তিনি আরও জানান, সোমবার সকাল থেকে চেঙ্গেরখাল নদীর পানি একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়। বুধবার রাতে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেয়। তাদের বাড়িতেও পানি উঠে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন তারা। বন্যার কারণে নেই বিদ্যুৎও। মোমবাতির আলোয় রাত কাটে কোনো রকম।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল আলী বলেন, আপনারাই (প্রতিবেদক) প্রথম এসেছেন এখানে। আমরা বেঁচে আছি কি না মরে গেছি কেউই খবর নেয়নি।
এমন অবস্থা শুধু ইসমাইলের নয়। শিয়ালা হাওর গ্রামের আয়তারা বেগম বলেন, রাতে যখন ঘরে পানি আসে, আমরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করি। পানির স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারিনি। তাই বারবার আল্লাহরে ডাকছি পানি কমানোর জন্য। আমরা গরিব মানুষ, অন্য জায়গায় গিয়ে ঘরবাড়ি করার সামর্থ্য আমাদের নাই। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই থাকি। এখন পর্যন্ত কেউ একটু খোঁজখবর নিতেও আসেনি। একই অবস্থা চলিতাবাড়ি গ্রামেও।
তবে, ভোক্তভোগীদের অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি ওয়ার্ড সদস্য দশরত সরকার। তিনি বলেন, আমাদের জন্য যে বরাদ্দ এসেছে তা তুলনামূল অনেক কম।
সরেজমিনে শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি ঘর-বাড়িতে উঠেছে। কেউ বাড়ির একপাশে গবাদিপশু নিয়ে বসবাস করছেন। কেউবা ঘরের সামনে ডিঙি নৌকায় রান্না করছেন এবং গোসলও করছেন। চলিতাবাড়ি গ্রামে হাওরের মধ্যখানে আধা পাকা ঘরের চতুর দিকে পানি থৈ থৈ করছে। অনেকেই বাড়িতে পানি উঠায় ঘরে তালা দিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। কারো ঘরে তিনদিন পরে চুলায় আগুন ধরেছে। শিয়ালা হাওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের চারদিকেই পানি। সেখানে মাত্র একটি পরিবারের শোকজন অবস্থান করছেন।
জানা যায়, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণ সিলেটের সাতটি উপজেলা ও সিলেট নগরীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অনেক-ঘরবাড়ি। পানিবন্দি রয়েছেন ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৭০জন মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে বানভাসি মানুষরা।
সিলেটে বন্যা প্লাবিত উপজেলাগুলো হলো- জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার(৩১ মে) সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে পানি ২০৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেটের সাতটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। জেলায় ৫৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে। প্লাবিত সাতটি উপজেলার ৩ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ২৪২জন। এরমধ্যে নন্দিরগাও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে প্রায় হাজারখানেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে নন্দিগাও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য দশরত সরকার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে আমার এলাকার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বন্টন করা সম্ভব না। আমরা আজ ত্রাণ সমাগ্রী আনতে গিয়ে দেখি ৪৫ কেজির ৬টি বস্তা, ১কেজি সমপরিমাণ ২৫ প্যাকেট চিড়া, গুড় আড়াইশ গ্রাম ও পানি বিশুদ্ধকরণ ১০টি ওষুধ দেয়া হয়। এগুলো আমরা আনতে চাইনি আমাদের জোর করে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই ইউপি সদস্য বলেন, আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামের মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছি এবং নিজেই ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি শনিবার জুলুরমুখ দুর্গা মন্দির থেকে ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, নতুন করে প্লাবিত উপজেলাগুলোর জন্য ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রস্তুত করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সবগুলোতে বন্টন করা হবে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest