ঘূর্ণিঝড় রেমাল: দেড় লাখ ঘর বিধ্বস্ত, মৃত্যু ১৬

প্রকাশিত: ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: দেড় লাখ ঘর বিধ্বস্ত, মৃত্যু ১৬

নিউজ ডেস্ক : ঘূর্ণঝড় রেমাল ১৯ জেলায় তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে। তবে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে কমবেশি সবখানে। এর আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৬ জন। দুর্গত এলাকায় ঝড়ে উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। টানা বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে প্রায় পৌনে তিন কোটি গ্রাহক।

 

ঘূর্ণিঝড় রেমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। এ সময় তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে মোট ১৯ জেলায় প্রায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, রেমাল সোমবার সকালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড় এবং সবশেষে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে দেশের মধ্যভাগে অবস্থান নেয়। এটি আজ মঙ্গলবার আরও দুর্বল হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিম্নচাপ আকারে আসামের দিকে চলে যাবে।

 

নারী-শিশুসহ ১৬ জনের মৃত্যু
রেমালের আঘাতে ১০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী। নিহত ব্যক্তিরা হলেন খুলনার লাল চাদ মোড়ল; সাতক্ষীরার শওকত আলী মোড়ল; বরিশালের জালাল সিকদার, মোকলেছ ও লোকমান হোসেন; পটুয়াখালীর শরীফ; ভোলার জাহাঙ্গীর, মাইশা ও মনেজা খাতুন এবং চট্টগ্রামের ছাইফুল ইসলাম হৃদয়। এর বাইরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ চাঙ্গিরগাঁও গ্রামে বসতঘর চাপা পড়ে নিস্পু নামে সাত বছরের এক শিশু মারা গেছে। এ সময় তার দাদি হোসনেয়ারা বেগম (৬৫) আহত হন। এছাড়া লালমনিরহাটের আদিতমারীতে গাছচাপায় রেজিয়া বেগম (৭২) নামের একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় মারা যান ৪ জন।

 

জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়েছে। এতে জেলার উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুতুবদিয়ায়ও অর্ধশত কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু গ্রাম।

 

খুলনার পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি। এ ছাড়া নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ে ব্যাহত হয়েছে যোগাযোগ।

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরার তালায় রিমালের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

 

বাগেরহাটে রোববার রাত থেকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। পানির প্রবল চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্যঘের। পানিবন্দী রয়েছে হাজার হাজার পরিবার।

 

সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা পারভীন বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে মাঝিডাঙ্গা-বাজনদার বাড়ির মোড় সড়কের ওপর দিয়ে পানি এলে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। এর আগেই সড়কের বিপরীত পাশে থাকা শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছিল। পানিতে আমাদের গ্যারেজের চারটি ইজিবাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রান্না করেও খাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। সেখানেও পানি।’

 

ভারী বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায়।

 

রেমালের প্রভাবে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সড়কসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বরগুনার পাথরঘাটায় প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০টি গ্রাম। আমতলীতে তিন শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নোয়াখালী হাতিয়ায়ও অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

ভেসে গেছে ঘেরের মাছ
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের কয়েক হাজার মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরগুনার পাথরঘাটা, আমতলীতেও মাছের ঘের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার পাইকগাছায় পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘার চিংড়িঘের ভেসে গেছে। কয়রা ও দাকোপে ভেসে গেছে অসংখ্য ঘেরের মাছ। অতিবর্ষণে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে।

 

সড়কে অসংখ্য গাছ, যোগাযোগ ব্যাহত
এদিকে রেমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে বিভিন্ন স্থানে সড়কে উপড়ে পড়েছে গাছ। এতে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উপচে পড়েছে গাছ। এতে আটকা পড়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা অসংখ্য যানবাহন। পরে ফায়ার সার্ভিস গাছ কেটে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পাবনার ফরিদপুরে সড়কে গাছ ভেঙে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়।

গুণ গত মান যার ভাল তার দাম একটু বেশি সিলেটের সেরা বাগানের উন্নত চা প্রতি কেজি চা দাম ৪৫০ টাকা হোম ডেলি বারি দেয়া হয়

tree

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন