‘প্রধানমন্ত্রী সবাইরে ঘর দেয়, আমার ভাগ্যে হইল না’

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

‘প্রধানমন্ত্রী সবাইরে ঘর দেয়, আমার ভাগ্যে হইল না’

জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বিধবা নারী ফুলকুমারী সিনহা।

 

নিউজ ডেস্ক : ‘১৫ বছর হইল স্বামী মরছে। সরকারি জায়গায় স্বামীর বানানো ঘরটিতে থাকি। ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজিয়া (ভিজে) অনেক সময় রাত কাটানো লাগে। খাওয়ার পানিও আনা লাগে (আনতে হয়) বহুত দূর তনে (বহুদূর থেকে)। একটা বাথরুমও কেউ বানাইয়া দিল না, ঝুপঝাড়েই সবকিছু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইরে (সবাইকে) ঘর দেইন (দেন), আবেদন করলাম কিন্তু আমার ভাগ্যে তা হইল না।’ – কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন স্বামীহারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায়ের বিধবা নারী ফুলকুমারী সিনহা (৬০)।

 

১৫ বছর ধরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ নারী। ফুলকুমারী উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ছয়ঘরি গ্রামের মৃত সেনু সিনহার স্ত্রী। ইসলামপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণের অনেক ঘর তৈরি হলেও নিঃসন্তান এ বিধবা নারী ফুলকুমারীর ভাগ্যে মেলেনি কোনো ঘর। একটি ঘর পেতে তার হাজারো আর্তনাদ।

 

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টিনের ঝুপড়ি ঘরের মেঝেতে অসহায়ভাবে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ ফুলকুমারী। বিছানার চারপাশে কাপড়, বোতলসহ নানা ব্যবহারিক জিনিসপত্র ছড়িয়ে রাখা। ঘরটি পুরনো হয়ে যাওয়া মরিচাধরা টিনের ভাঙাচোরা বেড়া আর ছাউনির তৈরি। দিনমজুর স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় খাস জমিতে ১৫ বছর আগে এ ঝুপড়ি ঘরটি নির্মাণ করেন। তারপর থেকেই এই ঘরেই ঠাঁই হয় বিধবা ফুলকুমারীর।

 

১০/১৫ ফুট আয়তনের এ ঘরেই রান্না, থাকা-খাওয়া তার। নেই কোনো পানির টিউবওয়েল। দূরের এক বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। নেই স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থাও। ৬০ বছর বয়সী বিধবা ফুলকামারীর কষ্টের জীবনে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসেননি কেউ।

 

ফুলকুমারী বলেন, ‘আমি নিঃসন্তান। স্বামী নিয়ে কোনোমতে জীবন চালিয়েছি। বিয়ের পর অন্য একটি গ্রামে বসবাস করলেও ১৫ বছর আগে এ খাস জমিতে স্বামী একটি ঘর নির্মাণ করে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তারপর থেকেই এ জায়গায় বসবাস করছি। টিনের ঘরটিতে কোনোমতে দিনযাপন করছি। এক সময় মানুষের বাড়িতে গৃহস্থালি কাজে শ্রম দিয়ে পেট চালাতাম। এখন বয়স হওয়ায় আর তেমন কাজ করতে পারি না।

 

মেম্বার-চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে গেছি ভাতা ও একটি ঘরের জন্য, কিন্তু তারা কেউ আমার খবর নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেলে, মরার আগে ভালভাবে জীবন কাটাতে পারতাম।’

 

ফুলকুমারীর প্রতিবেশী অজিত সিংহ ও সুমনা সিনহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন বিধবা ফুলকুমারী। বিধবা বা বয়স্ক ভাতাও ভাগ্যে নাই তার। আশপাশের মানুষের কিছু সহযোগীতায় কোনোরকম জীবন কাটছে তার।’

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিধবা ওই নারী প্রায় ১৫ বছর ধরে খাস জমিতে বসবাস করছেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর উপহারকৃত ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু সেটা এখনও বরাদ্ধ হয়নি।’

 

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘তিনি নারীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন

কম খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন