শেখ হাসিনাঃ আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

প্রকাশিত: ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২

শেখ হাসিনাঃ আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

স্কোয়াড্রন লীডার (অবঃ) সাদরুল আহমেদ খানঃ যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যিনি দেশবাসীর জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে কূটনৈতিক চমক দেখিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে হয়েছেন মাদার অফ হিউম্যানিটি, নারীর ক্ষমতায়নে রেখেছেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত , বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভূমিকা রেখেছেন, যার সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন “ডেভেলপমেন্ট মডেল” হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে, আর কেউ নন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ২৮ শে সেপ্টেম্বর নেত্রীর জন্মদিনে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।

 

১৯৪৭-১৯৭৫ঃ

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। শৈশব কেটেছে সবুজে বিস্তৃত গ্রামে, আর সেকারণেই হয়তো তিনি প্রকৃতির মতই উদার ও সরল।

 

বাবা ভক্ত মেয়ে শেখ হাসিনা, ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসলেন। শিশু বয়স থেকেই শেখ হাসিনা বাবাকে খুব খেয়াল করতেন, বাবার কাজে আগ্রহ দেখাতেন, অনুকরণ করতেন।

 

তাই ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে নাম লিখালেন, ইডেন কলেজে নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালেও তিনি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

 

১৯৬৮ সালে ডঃ ওয়াজেদ আলীর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং দ্বিতীয় সন্তান বিশিষ্ট অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

 

১৯৭৫-১৯৮১ঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জিয়া- মোস্তাকের নীল নকশায় আমরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হারালাম, তবে বেলজিয়ামে থাকার সুবাদে অলৌকিকভাবে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন শেখ হাসিনা।

 

ঘটনার দিন রাতে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় দাওয়াতে গিয়েছিলেন। ঘটনা শোনার সাথে সাথে দুই বোনের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান সানাউল হক। অবশ্য জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সেসময় সাহায্য করেন, বেলজিয়াম সীমান্তে গাড়ি পাঠিয়ে জার্মানিতে নিয়ে আসেন।

 

কিন্তু নিরাপত্তা শংকায় শেখ হাসিনা, ছোট বোন শেখ রেহানা আর দুবাচ্চাসহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রস্তাবে দিল্লীতে চলে আসেন।

শুরু হল নেত্রীর শরণার্থী জীবন। খুনীদের নিশানায় থাকায় নিজের নাম পাল্টে দিন কাটাতে থাকেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে যোগাযোগ ছিল তার।

 

Pain made her a believer. বাবার রাজনীতির উত্তরাধিকার, অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ আর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে তিনি দৃপ্ত শপথ নিলেন। এদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তখন ভাঙ্গনের খেলা, সামরিকজান্তারা পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল জিয়া। ধর-পাকড়, মামলা-রাহাজানি করে রাজনীতির নামই মুছে ফেলতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনীরা।

১৯৮১-১৯৯৬ঃ

 

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত করা হয়। ১৭ মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরলেন। শোক কে শক্তিতে রূপান্তর করে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলনে নামলেন।

 

“ স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”। ৯ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতন হল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে, শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীর ভুমিকা পালন করলেন।

 

১৯৯৬-২০০১ঃ (সপ্তম সংসদ)
১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেন। এ সময়ে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তির মধ্যে ছিল গঙ্গা পানি চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, বিধবা, দুঃস্থ, আসহায় মহিলাদের জন্য আর্থিক অনুদান চালু, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প চালু ইত্যাদি।

 

২০০১-২০০৮ঃ (অষ্টম সংসদ)

২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট সরকার গঠন করলে, শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়, চলে দেশব্যাপী গুম-খুন, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলার ঘটনা। তারেক রহমানের পরিকল্পনায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা কিন্তু হারাতে হয় অনেক কাছের নেতা কর্মীদের। ২০০৬-০৮ তত্ত্বাবধায়কের নাম করে উড়ে এসে জুড়ে বসে আরেক অরাজনৈতিক সরকার । তাদের কাছে নির্বাচন দাবী করলে অন্যায়ভাবে জেলে যেতে হয় শেখ হাসিনাকে।

 

২০০৮-২০১৪ঃ (নবম সংসদ)
জেল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি বের হলেন এবং ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করল। এসময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল মায়ানমারের সাথে জলসীমা মীমাংসা, দারিদ্রতার হার ৩৮% থেকে ২৪% ,জাতিসংঘ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।

 

তবে চ্যালেঞ্জও ছিল অনেক, পিলখানা হত্যাকান্ড বিচার সম্পাদন, নারীনীতি বিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর, রানা প্লাজা অগ্নিকান্ড পরবর্তী আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান দেশ সমুহের সাথে একর্ড সম্পাদন ইত্যাদি। এই সবগুলো চ্যালেঞ্জ তিনি সফলভাবে সামাল দিয়েছিলেন।

 

২০১৪-২০১৮ঃ (দশম সংসদ)

২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের জবাবে জনগণ আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলে শুরু হয় উন্নয়নের মহাকাব্য। এসময়কার সাফল্যগুলি ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ, মাথাপিছু আয় ১৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরন, দারিদ্রতার হার ২৪% থেকে ২২%, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, বিদেশি চক্রান্ত রুখে দিয়ে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সূচনা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, রুপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ শুভ উদ্বোধন, এ সময়ে সাবমেরিন ও স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ ।

 

এসময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শক্তহাতে সারাদেশে জঙ্গি দমন, ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন । এমন একজন নেতা তিনি, যিনি শুধু দূরদর্শীই নন, সততা ও বিনয় তাঁর বিশেষ গুণ।

২০১৮- (চলমান একাদশ সংসদ)

 

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ এর উন্নয়নের যাত্রা পূর্ণ গতি পেল। কিন্তু ২০২০ সালে হানা দিল করোনা ভাইরাস আর ২০২২ সালে দেখা দিল ইউক্রেন সংকট। এখানেও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা চমক দেখালেন । মহামারী মোকাবিলায় “ভ্যাক্সিন ডিপ্লোমেসিতে” সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশে এখন পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৩ কোটি ১ম ডোজ, ১২ কোটি ২য় ডোজ, এবং ১.৬ কোটি বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। তিনি এমন একজন নেতা যিনি কথা দিয়ে নয়, বরং কাজ করে দেখিয়ে নেতৃত্ব দেন।

 

বারবার দেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে নিজেকে এবং অন্যকে করোনা থেকে সুরক্ষার নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়মিত তৃণমূল প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা দিয়ে তদারকি করছেন।করোনা ও যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থ নীতির চাকা সচল রেখেছেন ।

খাদ্য ও কৃষিতে ভূরতুকি দিয়েছেন রেকর্ড পরিমাণ । সামাজিক নিরাপত্তা, মানব সম্পদ উন্নয়নে, ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছেন ।

 

এসময়ে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছিল।

 

সুদান ও শ্রীলংকাকে অর্থ ঋন সহায়তা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে।

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো নেতৃত্বগুণ শেখ হাসিনার মধ্যে আছে। এরই মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বৎসরে ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার রেকর্ড গড়ার বাজেট দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।

 

স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে, সম্পন্ন হয়েছে । সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় ২৬টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান আছে, এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে।

 

মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের এবং পদ্মা সেতু রেল লিঙ্কের কাজ চলছে। ঢাকা এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ চলছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ চলছে । শাহজালাল বিমান বন্দরের ৩য় টার্মিনালের কাজ চলছে । কক্সবাজার ও সিলেট বিমান বন্দর সম্প্রসারনের কাজ চলছে ।

 

১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করে হচ্ছে । সার্বজনীন পেনশন প্রবর্তন করা হচ্ছে ।

 

৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেটর সেন্টার, ১৩ টি ডিজিটাল ভিলেজ, স্থাপনের কাজ চলছে ।

 

পায়রা বিদ্যুৎ ইতিমধ্যে উৎপাদনে এসেছে, রামপাল ও রুপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে ।

 

মুজিব বর্ষের উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর, দেশব্যাপী মডেল মসজিদ এসবই শেখ হাসিনার দক্ষ দিকনির্দেশনায় উন্নয়নের মহাসড়কে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের চিত্র।

 

শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত রাষ্ট্রনায়ক। মাদার তেরেসা এ্যাওয়ার্ড, ইন্দিরা গান্ধী পিস এ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্ক পিস ট্রি এ্যাওয়ার্ড, চ্যাম্পিয়ন অফ দি আর্থ, ভ্যাকসিন হিরো ইত্যাদি নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।

 

শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলার আধুনিক রুপ। Sheikh Hasina knows the way, shows the way and goes the way. প্রিয় নেত্রীর জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।

লেখকঃ সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ