ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সিলেট ও ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২৪

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সিলেট ও ঢাকা

নিউজ ডেস্ক :

*দেশে ১৪ মাসে ১২ কম্পন

 

*ভূমিকম্প মোকাবিলার সক্ষমতা কম

 

ঝড়-বন্যার বাংলাদেশ এখন আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখে। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পে। এর অনেকগুলোর উৎপত্তিস্থলও দেশের ভেতরে।

 

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে দেশেও হতে পারে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে তা কল্পনাও করতে পারেন না তারা। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে, তার সিকি ভাগও নেই ভূমিকম্প মোকাবিলায়।

 

এমন প্রেক্ষাপট ১০ মার্চ পালিত হচ্ছে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি লড়ব, স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ব’।

 

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

 

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ছোট আকারের ভূমিকম্প বেড়েছে। গত ১৪ মাসে ১২টি ভূমিকম্প হয়েছে। যেগুলো ছিল মৃদু থেকে মাঝারি আকারের। ভূতত্ত্ববিদরা বলে আসছেন, ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। তবে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আয়তন অনুযায়ী অধিক জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবেই এ ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়েছে।

 

গত ২০ বছরে ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও একাধিক ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে।

 

ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় ২০০১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল আগারগাঁও থেকে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে। সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। ২০০৮ সালের ২৬ জুলাই ময়মনসিংহে ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ১৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে উৎপত্তি হওয়া ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ১৬ কিলোমিটার গভীরে। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল আগারগাঁও থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁও থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরের টাঙ্গাইলে উৎপত্তি হয়েছিল ৩ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প।

 

এ ছাড়া ২০২৩ সালে ঢাকার আশপাশে ৩টি ভূমিকম্প হয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয় রাজধানী ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। এর আগে একই বছর ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৪ মাত্রার। অন্যটি ৫ মে ঢাকা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে দোহারের কাছে উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৪ দশমিক ৩ মাত্রার।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি প্লেটের বাউন্ডারিতে অনেক বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। আমরা এই প্লেট বাউন্ডারির পূর্ব থেকে ১০০-২০০ কিলোমিটার দূরে। যেহেতু আমরা প্লেট বাউন্ডারির কাছে ফলে ভূমিকম্প হওয়াই স্বাভাবিক।’

 

তিনি বলেন, যেখানে প্লেট বাউন্ডারি আছে, প্লেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক চ্যুতি বা ফাটল আছে। এসব চ্যুতি ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ঢাকার আশপাশেও চ্যুতি রয়েছে। এই চ্যুতিতে যদি ২০০ বছর অথবা ৫০০ বছর আগে ভূমিকম্প হয়ে থাকে, তবে এখানে আবার ভূমিকম্প হবে এটাই নিয়ম। অর্থাৎ আগে এ অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ওই ভূমিকম্প আবার হবেই, এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ হচ্ছে যেখানে ভূমিকম্প হয়, সেখানে শক্তি সঞ্চার হয়। এই শক্তিটা যখন ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়, তার আশপাশের পাথর, মাটি একপর্যায়ে ভেঙে যাবে। ভেঙে গিয়ে যদি বিচ্যুত হয়ে যায়, তখনই বিপর্যয় ঘটে।

 

ঢাকা সব সময় ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হয় না। তবে অতীতে হয়েছে। যেগুলো হয়েছে তাতে ক্ষতি তেমন হয়নি। শুধু ১৮৯৭ সালে যে ভূমিকম্পটা হয়েছে, তাতে ঢাকা শহরের কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। যদিও ক্ষতি ছিল কম। তবে ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই ধরনের ভূমিকম্প হলে এখন ঢাকা শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।