প্রকাশিত: ২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২২
নিউজ ডেস্ক : সৈয়দ জিয়াউল হক। জন্ম ১৯৭৮ সালের ৬ নভেম্বর, মৌলভীবাজারের শহরতলির মোস্তফাপুর ইউনিয়নে।
একসময়ের চৌকস সেনা কর্মকর্তা হয়ে গেলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সামরিক বিভাগের প্রধান। সিলেট বিভাগের জিয়াউল হক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর ঘুম হারাম করা এক নাম।
দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি সিলেটেও আত্মগোপনে ছিলেন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি জিয়া। বেড়াতে যান নোয়াখালীর শ্বশুরবাড়িতেও। পুকুরে গোসল করেন, মাছও ধরেন। ঢাকায় আসেন টাকা তুলতে। সেই টাকা আবার শ্বশুরবাড়িতে পাঠান- এসব তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলোর হাতে এলেও ধরা পড়েন না। খবর দৈনিক কালবেলা’র।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে- জঙ্গি জিয়া দেশেই আছে। কয়েক দফা তাকে গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত ধরা যায়নি। এ ধরনের জঙ্গিরা ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে চলাফেরা করে বলেই ধরা কঠিন। সর্বশেষ ঢাকার গুলিস্তান থেকে দুই দফা নিজের সংগঠনের এক সদস্যের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন জিয়া। আরেক দফা নেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী জালও ফেলেছিল পুলিশ। তবে তাতে পা দেননি জিয়া।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, দুর্ধর্ষ এ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে এক সময় নির্ঘুম রাতও কেটেছে তাদের। টানা অভিযানে আনসার আল ইসলামের নৃশংসতা কমে এলে জিয়াকে গ্রেপ্তারে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে চেষ্টা থেমে যায়নি।
যত জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সবার কাছ থেকেই জিয়ার তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও প্রযুক্তিগত তদন্ত সমন্বয় করে জিয়ার অবস্থান অনুমান করে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছিল।
ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো জিয়া সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর। ২০১১ সালে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিষয়টি জানাজানি হলে পালান তিনি। ২০১৩ সালের আগস্টে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে সৈয়দ জিয়াউল হকের জঙ্গি সম্পৃক্ততা। ওই সংগঠনের আরেক নেতা জসীমুদ্দীন রাহমানীকে গ্রেপ্তারের পর জিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই সংগঠনটিই পরে ‘আনসার আল ইসলাম’ নামে নৃশংসতা চালায়।
পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, জিয়া গত বছর ঢাকার গুলিস্তানের আহাদ পুলিশ বক্সের পেছনে তার সংগঠনের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। সেই ব্যক্তি জানতেন না, ওই লোকই পলাতক জিয়া। টাকা দেওয়া ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছবি দেখালে তিনি জানান টাকা নেওয়া লোকটাই ছিল জিয়া।
জিয়াকে অনুসরণে যুক্ত পুলিশের সূত্রগুলো বলছে- সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহে ছিলেন জিয়া। ২০১৯ সালে ঈদুল ফিতরের আগে চট্টগ্রামে রেলের টিকিটও কাটেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও বাড্ডায় থেকেছেন দীর্ঘদিন। টঙ্গীতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন। ময়মনসিংহে আরেক জঙ্গির বাড়িতে ছিলেন কয়েক মাস।
পলাতক অবস্থাতেই নোয়াখালীর একটি এলাকায় তৃতীয় বিয়ে করেন জিয়া। বিয়ের সময় তার শ্বশুর ছিলেন কারাগারে। ওই বিয়ের ব্যবস্থা করে আনসার আল ইসলামের এক সদস্য। তখন কারাফটক থেকে নেওয়া হয় শ্বশুরের অনুমতি। তিনিও জানতেন না, জঙ্গি জিয়ার কাছেই বিয়ে হচ্ছে মেয়ের। চার-পাঁচবার জিয়া ওই শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
সর্বশেষ তিন বছরে জিয়া তার শ্বশুরবাড়ি গেছেন বলে তাদের কাছে তথ্য নেই। তবে খবর পেয়ে তারা ওই সময় নোয়াখালী গিয়েছিলেন। ওই সংসারে জিয়ার দুটি মেয়ে রয়েছে। তবে তার স্ত্রী-কন্যারা এখন আর নোয়াখালীতে যান না।
জিয়ার এক সময়ের বন্ধুরা পুলিশকে বলেছেন, চাকরিরত অবস্থাতেই ২০০৯ সালে জিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যান। দেড় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জিয়া। ওই সংসারেও দুটি সন্তান রয়েছে। তার প্রথম শ্বশুর ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তার কাছে জিয়ার প্রথম সংসারের একমাত্র ছেলে সন্তান থাকে। তবে জিয়া তার খোঁজখবর নেন না।
পুলিশের জঙ্গিবিরোধী ইউনিটের নানা স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, দুর্গম চরাঞ্চল রয়েছে, এমন কোনো জেলায় পরিচয় গোপন করে বাস করছেন জিয়া। গোয়েন্দাদের ধারণা, এখন তার দাড়ি নেই। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জিয়া ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময়ই মেধাবী ছিল। বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থাতেও ছিল চৌকস কর্মকর্তা। নিজেকে রক্ষার সব কৌশলই তার জানা। প্রযুক্তি বিষয়েও ধারণা আছে। তাই তাকে আটকানো যাচ্ছে না।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন যারা আনসার আল ইসলামের জঙ্গি, তারা জিয়াকে চেনে না। গ্রেপ্তারের পর ছবি দেখালে বলে যে জিয়াকে দেখেছিল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালের পর টানা অভিযানে জঙ্গি জিয়ার অনেক সহযোগী নিহত হয়েছে। অনেকে আছে কারাগারে। তারা জিয়ার চলাফেরা সম্পর্কে ধারণা রাখলেও এখনকার অনুসারীরা তাকে দেখেনি।
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest