প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪
ডা. সানজিদা শাহরিয়া : মানুষ কেন ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে, এই বিষয় নিয়ে বহুদিন ধরেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা হচ্ছে। উপাত্তে দেখা গেছে, প্রেমে পড়ার জন্য বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত তকমা খুব একটা কাজ করে না। কিন্তু গবেষণায় বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে মোটা দাগে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত প্রেম, দ্বিতীয়ত শুধু যৌন সম্পর্ক, তৃতীয়ত যৌন কর্মের উদ্দেশ্যে প্রেম করা এবং চতুর্থ জীবনসঙ্গীর বিকল্প সঙ্গী খুঁজে ফেরা।
মুশকিল হলো বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক যিনি করেন, গবেষণা বলছে, তিনি শেষ পর্যন্ত বিষণ্নতায় ভোগেন এবং কথা রাখতে পারেন না। এক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গী, যিনি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন না, তাঁর কাউন্সেলিংয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ তিনি প্রতিমুহূর্তে অনুভব করেন, ভয়ংকরভাবে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। আবার দেখা গেছে, যেসব পুরুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান, তাঁদের মধ্যে মাদক ব্যবহারের প্রবণতা এবং দাম্পত্যে যৌন অতৃপ্তির প্রবণতা বেশি থাকে।
ফলে এ ধরনের দম্পতি যখন কাপল কাউন্সেলিংয়ে আসেন, তখন দেখা যায়, তাঁদের অনেকেই হীনম্মন্যতা এবং অনৈতিক ভাবনা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন। সময়মতো কাপল কাউন্সেলিং না নিলে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের দিকে যান। কিন্তু আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপিকে উপযুক্ত চিকিৎসা বলে গণ্য করা হয় না। গবেষণা বলছে, দাম্পত্য কলহ যদি অবিশ্বস্ততা বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য হয়, তবে এটি দাম্পত্যের ভোগান্তির কারণ হিসেবে বেশি ভূমিকা পালন করবে।
মনে রাখতে হবে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গোপন থাকে না। আর কেউ না জানুক জীবনসঙ্গী ঠিকই টের পাবেন। হয়তো কারও সময় বেশি অথবা করও কম লাগে। ধরা পড়ার পর মিথ্যা বলে নিজেকে সঠিক বলে দাবি না করে যখন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করা হয়, তখন পরস্পরের খোলামেলা আলোচনায় নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা সম্ভব হয়। সেক্ষেত্রে ভালো ফলও পাওয়া যায়। দেখা গেছে, এতে দাম্পত্য কলহ কমে যায়। কিন্তু এই বদলানোর প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ নিজেকেই করতে হবে। কারণ, আমরা আসলে নিজেকে ছাড়া কাউকেই বদলাতে পারি না।
তাই জীবনসঙ্গীর কাছে সততার সঙ্গে সব স্বীকার করে নেওয়াটাই উত্তম। কারণ, একটা মিথ্যা ঢাকার জন্য শেষ পর্যন্ত কয়টা মিথ্যে বলতে হয়, তার কোনো হিসাব থাকবে না। মিথ্যা কখনো না কখনো ধরা পড়বেই।
কাপল থেরাপিতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ, কাপল থেরাপিতে তিনটি পর্যায়ে কাজ করতে হয়। আচরণ, চিন্তা এবং আবেগের জায়গাকে একই সুতোয় গাঁথা সহজ কথা নয়। ফলে কাপল থেরাপিতে সময় লাগে।
অনেকেই দু–তিনটি সেশনের পরই অস্থির হয়ে যান। তাঁরা মনে করেন, থেরাপিস্টের কাছে কোনো জাদুর ছড়ি আছে, যেটা তিনি ঘুরিয়ে দিলে সহজেই যা চাচ্ছেন, তা পেয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে বলতে পারি, থেরাপিস্ট কাপলকে সম্পর্কে বিদ্যমান জটগুলো দেখিয়ে দেবেন। কোন জট আগে খুলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে যারা এসেছেন, তাঁদের ইচ্ছা শক্তির ওপর। এ জন্যই কাপল থেরাপিতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। মাসের পর মাস তো বটেই, বছরও পেরিয়ে যেতে পারে। ফলে দুদিনে নিরাময় হয়ে যাবে এই চিন্তা করে এলে ভুল করবেন।
রবীন্দ্রনাথের কথায় বলতে পারি, ‘লোকে ভুলে যায়, দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নূতন করে সৃষ্টি করা চাই।’ দাম্পত্য সম্পর্কে ঢোকার আগে প্রেমিক যুগলের মধ্যে বাস করে তীব্র রহস্য! দাম্পত্যে সেই রহস্য ক্রমশ ফিকে হয়ে আসে। আর এর পরিণতিতে পরস্পরের প্রতি অনাগ্রহ জন্ম নেয়। একজন আরেকজনকে ভালোবাসতে ভুলে যান।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার
উপদেষ্টা সম্পাদক : মো. রেজাউল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ (বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিল)
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: আবু বক্কর তালুকদার
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নূরুদ্দীন রাসেল
অফিস : ৩৭০/৩,কলেজ রোড,আমতলা, আশকোনা,ঢাকা-১২৩০,
Call : 01911120520
Email : info.sylhet24express@gmail.com
Design and developed by Web Nest